অজয় রায়
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা গভীর অর্থসঙ্কটে পড়েছে। নিজেকে কার্যত ঋণ খেলাপি হিসাবে ঘোষণা করেছে দেশটি। বিদেশী মুদ্রা ভাণ্ডারের বিপুল ঘাটতি রয়েছে সেখানে। খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি আমদানি করতে পারছেনা তারা। এর মধ্যেই আআইএমএফ-র প্রতিনিধি দল ২০-৩০ জুন কলম্বো সফর করেছে।[১] প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সরকার আরও ঋণ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আই এম এফ) সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সেদেশে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে। জীবনদায়ী ওষুধও অমিল হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি ৪০% শতাংশ
ছুঁতে যাচ্ছে। আর খাদ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে
৫৭.৪%।[২] খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে। জ্বালানির সঙ্কটও তীব্র। পেট্রল পাম্পে প্রতীক্ষারত মানুষের দীর্ঘ সারি। দৈনিক ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং চলছে। এদিকে সরকারি কর্মচারীদের
দুই সপ্তাহ ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার নির্দেশ ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন অবশ্য মানুষের নজর ঘোরাতে শ্রীলঙ্কার সঙ্কটের জন্য মূলত চীন দায়ী বলে প্রচার চালানো হচ্ছে বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যমে। স্পষ্টতই কাউকে বলির পাঁঠা বানানো দরকার। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শ্রীলঙ্কার অর্থসঙ্কটের মূল অনেক গভীরে। সেদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরতান্ত্রিক সরকার জনবিরোধী নয়া উদারবাদী নীতি অনুসরণ করে চলেছে। দেশি
ও বিদেশী বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। যা বর্তমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ভিত্তি রচনা করেছে। ঋণের ফাঁদে পড়েছে দেশটি। ফের আইএমএফ-র ঋণ নিলে তা আরও কৃচ্ছসাধনের নীতি গ্রহণে সরকারকে বাধ্য করবে। ফলে জনসাধারণের উপর বর্ধিত বোঝা চাপানো হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারাবেন। মজুরি এবং অবসরভাতাও ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করা হবে। ইতিমধ্যেই ঢালাও বেসরকারীকরণের উদ্যোগ চলছে। সম্প্রতি মান্নারের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতীয় শিল্পপতি আদানিকে দেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদী চাপ দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
গত এপ্রিল থেকেই শ্রীলঙ্কাব্যাপী গণবিক্ষোভ চলছে। ইতিমধ্যে একাধিক ধর্মঘটে মানুষের বিপুল সাড়া মিলেছে। শাসক দলের প্ররোচনাতে অবশ্য আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। যার ফলে দেশজুড়ে সংঘর্ষ ছড়ায়। সেই সুযোগে আরও তীব্র দমন-পীড়ন নামিয়ে আনে শাসক শ্রেণী। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তবে সেদেশে শিক্ষক ও চিকিৎসক সহ নানা অংশের মানুষ প্রতিবাদে পথে নামছেন।
আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছেন। অন্যান্য রাজাপক্ষে ভাইরা সহ পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভার সকলে কিছুদিন আগেই
পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদ আঁকড়ে আছেন গোতাবায়া। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠের অবাধ আধিপত্যবাদের ঢেউতে ভর করেই ক্ষমতায় এসেছিল রাজাপক্ষে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শ্রীলঙ্কার
অর্থনীতির প্রকৃত পুনরুদ্ধার করতে হলে অবিলম্বে অবৈধ ঋণ
পরিশোধ প্রত্যাখান করা দরকার। আর ক্রমবর্ধমান খাদ্যসঙ্কটের মোকাবিলা করতে গণবন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরুরি। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়ার বিষয়টি
গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতার থেকে অন্যান্য দেশগুলিরও শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।
৩০.০৬.২০২২
তথ্যসূত্র
[১] By Press Trust of India, "Sri Lankan PM
Wickremesinghe hold talks with IMF team on economic programme", June 20,
2022, Business Standard
[২] By Bloomberg, "Sri Lanka inflation jumps
close to 40% in May as shortages persist", June 01, 2022, Business
Standard
---
No comments:
Post a Comment