মার্কিন হস্তক্ষেপে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ফের তালিবান আধিপত্য
অজয় রায়
গত ১৫ই অগাস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালিবান বাহিনী। সরকারের পতন হয়। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বহু মানুষ আতঙ্কে দেশ ত্যাগ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ফলে কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। জালালাবাদে মানুষ যখন প্রতিবাদে পথে নামেন, তাদের উপরও গুলি চালায় তালিবানরা। এদিকে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মহিলাদের উপর নির্যাতনের সংবাদ মিলছে। জোর করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বোরখা পরা বাধ্যতামূলক হচ্ছে।
তালিবানরা সরকার গড়ার কথা বলছে। সবাইকে ক্ষমা করে দেবারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে মিডিয়া সূত্রে জানা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তার পরেও অবশ্য মার্কিন বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ চালাচ্ছিল। কিন্তু তালিবানরা দ্রুত বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে এগিয়ে আসে। আর অবশেষে তারা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তালিবান এবং আল কায়দার মতো ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে মদত যুগিয়েছিল ওয়াশিংটন। তালিবানরা মূলত পাস্তুন। এরা আফগানিস্তানে সরকারও গড়েছিল। তখন তারা মহিলা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার হরণ করে। আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে আশ্রয় দেয়। তবে ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনার পর মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-র নামে আফগানিস্তানে আগ্রাসণ চালায়। তালিবান সরকার পড়ে যায়। মার্কিন মদতপুষ্ট সরকার গঠিত হয়।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের কার্যত ঔপনিবেশিক দখলদারির বিরোধিতা করলেই সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করে কারারুদ্ধ করা হতো। নির্যাতন চালানো হতো। বহু সাধারণ মানুষকে হত্যাও করা হয়। মার্কিন মদতপুষ্ট পুতুল সরকার ছিল চরম দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়। যার সুযোগ নিয়ে তালিবানরা ফের প্রভাব বিস্তার করে। সংঘর্ষ চলতে থাকে। উভয় পক্ষই মানবাধিকা লঙ্ঘন করে চলে।
গত দুই দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে আফগানিস্তানে।[১] কিন্তু দেশটিতে চরম দারিদ্র বৈষম্য রয়েই গেছে। যুদ্ধে আরও বিধ্বস্ত হয়েছে অঞ্চলটি। আর এই সময়কালে সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় পৌনে দুই লক্ষাধিক মানুষ; যার বড় অংশই বেসামরিক নাগরিক।[২] নিহতের সংখ্যাটা প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি বলেই অবশ্য মনে করেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
আফগানিস্তানের অবস্থান রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাটি জ্বালানি সমৃদ্ধ। ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পকৃত উদ্দেশ্য ছিল এঅঞ্চলে আধিপত্য কায়েম করা। কিন্তু তারা শেষ অবধি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। লক্ষণীয় যেটা, হালকা অস্ত্রে সজ্জিত একটি স্থানীয় বাহিনীর কাছে যুদ্ধে পর্যুদস্ত হতে হয়েছে পরাশক্তিকে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার কৌশল হিসাবে তালিবানরা ‘মডারেট’-এর মুখোশ পরার চেষ্টা করছে এখন। তবে আদতে তারা ধর্মোন্মাদ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। প্রসাধনী পরিবর্তনের আড়ালে থাকা তাদের আসল চেহারাটা নানা ঘটনার থেকেই সামনে চলে আসছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ আফগানিস্তানে শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় জোর দিচ্ছেন। যখন সরকার গড়ার আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই পঞ্জশির উপত্যকায় নর্দার্ন অ্যালায়েন্স সক্রিয় রয়েছে। আফগানিস্তানে স্বাধীনতা দিবসে কাবুল, জালালাবাদ, আসাদাবাদ এবং খোস্ত’র মতো বিভিন্ন শহরে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হয়েছে। যেখানে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মানুষ।
২০/০৮/২০২১
তথ্যসূত্র:
[১] Patricia Sabga, “The US spent $2 trillion in Afghanistan – and for what?”, August 16, 2021, Aljazeera
https://www.aljazeera.com/economy/2021/8/16/the-us-spent-2-trillion-in-afghanistan-and-for-what
[২] Frank Gardner, ‘‘20 years in Afghanistan: Was it worth it?’’, April 17, 2021, BBC
No comments:
Post a Comment